মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রিচার্জ ইউর ডাউন ব্যাটারি!-ঝংকার মাহবুব

 

আপনার কি কোনো কাজে মন বসে না? জীবনের ব্যাটারি কি ডাউন হয়ে গেছে? তাহলে দেরি কেনো !রিচার্জ ইউর ডাউন ব্যাটারি!
সত্যি বলতে চারদিকে হাজারো বই পাওয়া যায় মোটিভেট হওয়ার জন্য। মোটিভেট হয়ে সব সময় মোটিভেট থাকতে পারাটাই সাফল্য। বইটাতে এ ধরনের কথাই বলা আছে।

এখন বলেন না, যে ভাই ২০২১সালে এসে কেনো এই বইয়ের রিভিউ দিচ্ছেন। তো সেটা যদি বলতে হয় তাহলে আমি বলবো আমি এই বইটা ২০১৮সালে কিনেছি।জ্বি হ্যাঁ আপনি একেবারেই সঠিক শুনেছেন। অনেকদিন পর এখন আবার বইটা পড়লাম, তো আগে যেহেতু ভিডিও করার চিন্তা মাথায় ছিলোনা সেজন্য তখন ভিডিও বানাইনি।ভেরি সিম্পল, এখন আপনাদের বইটি সম্পর্কে জানানোর আগ্রহ জাগলো তাই জানাতে চলে এলাম ।

প্রথমেই এই বইয়ের কিছু ভালো লাগার অংশ বলিঃ

আমি এই বইটিকে অন্যরকম বলব কেননা বইটি গল্পের মতো করে কথোপকোথন আকারে লেখা হয়েছে। একজন বড় ভাই তাঁর ছোট ভাইকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটা শুনে তার কী প্রবলেম হচ্ছে আবার


সেটা কিভাবে সল্ভ করা যায় - এরকম ভাবে বইটি এগিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের স্টুডেন্টদের মধ্যে যাদের কোনোকারণে ব্যাটারি ডাউন বা লো হয়ে গেছে তাদের জন্য আাবির নামের চরিত্রটি উত্তম মডেল হতে পারে এবং মাসুম ভাই হতে পারে উত্তম কাল্পনিক মেন্টর। ঝংকার ভাইয়া তাঁর আগের বইয়ের মতো কয়েক অধ্যায় পর পর প্রশ্ন করেছেন , অ্যানসার দেওয়ার জন্যে জায়গাও রাখা হয়েছে।
.  
আরেকটি বিষয় আমার কাছে ভালো লেগেছে সেটা হলো -সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তিদের উক্তি ব্যবহার। সর্বপ্রথম উক্তিটি আমার কাছে খুব উপযুক্ত মনে হয়েছে।
.
বইটির শেষে একটা চমত্কার জিনিস আছে। নিজের অবস্থানটা কোথায় সেটা মাপার জন্যে বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নিজের ব্যাটারির কতটুকু চার্জ আছে সেটাও মাপা যাবে। এখানেই শেষ না, ব্যাটারি ডাউন হলে কিভাবে রিচার্জ করতে হবে সেটাও আছে। পড়লেই বইটির কেরামতি বোঝা যাবে!

এবার বইটির ভালো লাগার কিছু টপিকে আসি-
বইটির "আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না " টপিকটিই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে। সত্যিই তো আয়েশ আর অর্জন কি একসাথে পাওয়া আদৌ সম্ভব! কোনো কাজে সফল হতে হলে কাজটার সাথে মনে প্রাণে লেগে থাকতে হবে।

আমরা ভাবি আমাদের ট্যালেন্ট আছে। তবে ট্যালেন্ট দিয়ে সব হয়ে গেলে যে ফার্স্ট হয় তাকে ক্লাসে যাওয়া লাগত না। এক সপ্তাহ হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করে ডাক্তার হওয়া গেলে, পাঁচ-ছয় বছর ধরে মোটা মোটা বই কেউ পড়ত না। তিন-চারবার ব্যর্থ হয়ে ছেড়ে দিলে একটা বাংলাদেশের জন্ম হতো না। দুনিয়ার কেউই শর্টকাটে সফল হতে পারে নাই। আমি এবং আপনিও সেটা পারবোনা।

আসলে দুনিয়াতে ট্যালেন্ট বলতে কিছু নেই। পরিশ্রমী মানুষেরা  দিনের পর দিন সাধনা করে যে দক্ষতা, যে জ্ঞান অর্জন করে, আইলসা মানুষেরা সেটাকেই ট্যালেন্ট বলে।

একটা উদাহরণ দিয়েছেন তিনি ,যেটা আমি এখানে হুবহু তুলে দিলাম- এই দেখ আমাদের ক্লাসের সুজন। সে দুই বছর ধরে রেজাল্টে লাড্ডু মারছে। গত বছর ডিসিশন নিল, যে করেই হোক, ওভার অল সিজিপিএ ৩.০–এর ওপরে তুলতেই হবে। তাই আগের লাইফ স্টাইল ছেড়ে দিয়ে ধুমাইয়া পড়ালেখা শুরু করছে। শুধুমাত্র রেগুলার ক্লাস, ঠিক সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট আর পরীক্ষার আগে সিরিয়াসলি পড়ে সেই লাড্ডু মার্কা সুজনই গত সেমিস্টারে পাইছে ৩.৫২। আর এই সেমিস্টারে পাইছে ৩.৬৪। ব্যস, কঠোর পরিশ্রম দিয়ে ট্যালেন্টের তকমা কিনে ফেলছে সে।

অন্যদিকে আমাদের কলেজের মেরিটোরিয়াস স্টুডেন্ট ভার্সিটিতে গিয়ে চার সাবজেক্টে রেজাল্ট খারাপ করে ট্যালেন্টের মেডেল হারিয়ে ফেলছে। সো, ট্যালেন্ট কিচ্ছু না। ট্যালেন্ট বলতে কিচ্ছু নাই। অনলি পরিশ্রম ইজ রিয়াল।

আজকের পর থেকে মেধা আছে, ট্যালেন্ট আছে, ব্যাকআপ আছে মনে করে ঘুমিয়ে থাকবি না। এগুলা সোজা, আগে কত করছি বলে ঢিলামি করতে যাবি না। পিছলামির কথা মাথায়ও আনবি না। তাহলে দেখবি অল্প কয়দিনেই তোর চাইতে কম ট্যালেন্টের পরিশ্রমী পোলাপানরা তোকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছে।

মনে রাখবি, আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না। অলসতা সফলতার বন্ধু হতে পারে না। একটু বেশি আয়েশ করার নাম ভাঙিয়ে আলসেমি করতে যাবি না। ট্যালেন্টের দোহাই দিয়ে ফাঁকিবাজি করলে, অর্জন আসবে না। বরং অর্জন তোকে বর্জন করবে।

তাই শ্রম, সাধনা দিয়ে নিত্য নতুন ট্যালেন্টের তকমা জোগাড় করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বি। তাহলেই ভালো রেজাল্ট তোকে ফলো করবে।

Hard work beats talent when talent doesn't work hard. —Tim Notke

 

নতুন আইডিয়াগুলোর মধ্যে আরেকটা আইডিয়া যেটা হলো-  "আত্মদিবস" এটা বেশ ভালো লেগেছে।  শেষের অংশটুকুও বেশ আকর্ষণীয়।

১। আত্মদিবস 📑: নিজের পছন্দের কাজগুলোর জন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় বের করি
২। ক্যারিয়ার ব্যারিয়ার 🎯: এক লাইনে আছি তার মানে এই না, যে অন্য লাইনের কিছুই করতে পারবো না
৩। হাতি খাওয়া 🐘: যেকোনো কাজ টুকরো টুকরো করলে, কোনও কাজই খুব একটা অসম্ভব থাকে না
৪। বনের বাঘে খায় না 🦁, মনের বাঘে খায় 🧠: বেশী চিন্তা করে যেন সহজ বাস্তবকেও গুলিয়ে না ফেলি
আপনি নিজেকে উদ্যমী করতে কী করেন 🔥? পারলে কমেন্টে জানাবেন 😄


বইটি হতাশায় ভোগা ডিপ্রেস মানুষের জন্য, মূলত যাদেত ব্যাটারি ডাউন কিছুটা তাদের জন্য ভালো বই হতে পারে।
তবে একটা কথা শরীর টা সুস্থ থাকা চাই আগে। এই কথা কোনো বইতে লিখে না কেনো জানি নাহ।

সবশেষে বলা যায় জীবনে পথ চলার সময় হোঁচটও খেতে হয়। হোঁচট খেলেই তার পরাজয় হয় না, তার জীবন থেমে থাকে না। চৈনিক প্রবাদেই তো আছে, "পতন কখনো পরাজয় নয়, পরাজয় তখন যখন কেউ উঠে দাড়াতে চায় না"। আমাদের সবারই কোনো না কোনো কারনে ব্যাটারি ডাউন হতে পারে। তাই বলে বসে থাকব? নিজেকে চেইঞ্জ করতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যেরকম আমি একটু একটু করে এগোচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমার মনে হয় সকল স্টুডেন্টদের বইটি পড়া উচিত। আমার মতোদেরতো মাস্ট। ব্রিলিয়ান্টরাও পড়তে পারে।

বইটি প্রকাশ করেছে আদর্শ। এই প্রকাশনীকে আমি অনেক পছন্দ করি। কেননা এই প্রকাশনীর বইও ভালো, দামও খুব কম।

 

সবশেষে নেলসন মেন্ডেলার একটা কথা বলি-

It always seems impossible until it’s done. —Nelson Mandela.

বুক রিভিউঃ "রিচার্জ ইউর ডাউন ব্যাটারি"
লেখকঃ ঝংকার মাহবুব
প্রকাশকঃ আদর্শ
মূল্যঃ ২০০ টাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your valuable comment.