শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১

প্রোডাক্টিভ মুসলিম-মুহাম্মদ ফারিস । ইসলামিক বই রিভিউ (বিস্তারিত রিভিউ পড়ুন) Productive Muslim Book Review in Bangla

 ধরুন আপনি আর মাত্র ৩ বছর বেঁচে থাকবেন। কিন্তু আপনি যদি এমন কিছু কাজ করেন যা অন্যের ২০ বছরের কাজের সমান তবে এই বৃদ্ধি পাওয়া কাজই আপনার ৩ বছরের বেঁচে থাকার তুলনায় ‘বারাকাহ’।ছোট্ট কাজ বা প্রচেষ্টায় অপ্রত্যাশিত অধিক পাওয়াকেই বারাকাহ বলে।

আজকে আমি কথা বলবো,আমার হাতে থাকা বিদেশী বই প্রোডাক্টিভ মুসলিম নিয়ে।যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালে, আর আমার কাছে যে গ্রন্থটি আছে সেটি ওই বইয়ের অনুবাদ।বইটি লিখেছেন-মোহাম্মদ ফারিস। এই লেখক মোহাম্মদ ফারিস পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম আত্নোন্নয়নমূলক ওয়েবসাইট Productivemuslim.com এর প্রতিষ্ঠাতা।



বইটিতে রয়েছে মোট ৯টি অধ্যায়।বইটি পড়ে আপনি বুঝতে পারবেন একজন মুসলিম হিসেবে আপনার লাইফস্টাইল টা কেমন হবে,কেমন যাচ্ছে কিংবা আপনার জীবনযাপনে কোন পরিবর্তনগুলো আনার এখনই সঠিক সময়।

আমরাজানি, প্রোডাকটিভিটি=আউটপুট/ইনপুট। লেখক এখানে দেখিয়েছেন মনোযোগ বা ফোকাস এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা এবং লাভজনক উদ্দেশ্যে ব্যায় করা সময় মিলেই হচ্ছে প্রোডাকটিভিটি।এই বইটিতে আত্ন উন্নয়ন,আত্ন বিকাশ, আত্নোপব্ধির এক সুনিপন কম্বিনেশন তুলে ধরা হয়েছে। মেধা,সময় এবং বোধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে নিজেকে কিভাবে এই নশ্বর পৃথিবীতে অধিষ্টিত করা যায় তা

আপনি প্রতি চ্যাপ্টার পরার মাধ্যমেই বুঝতে পারবেন।

তো এখন বইটির সূচিপত্র বা অধ্যায় নিয়ে যদি আমি বলি তাহলে বলবো এই বইয়ের অধ্যায়গুলো হলো-

প্রোডাক্টিভিটি কি?

স্পিরিচুয়াল প্রোডাক্টিভিটি

ফিজিক্যাল প্রোডাক্টিভিটি

সোশ্যাল প্রোডাক্টিভিটি

গোল এবং ভিশ্নের সাথে প্রোডাক্টিভিটিকে যুক্ত করা

প্রোডাক্টিভ অভ্যাস গঠন

রমজান এবং প্রোডাক্টিভিটি

মৃত্যু পরবর্তী প্রোডাক্টিভিটি ইত্যাদি।

এখন আমি এই বইয়ে আমার ভালো লাগার কিছু টপিক শেয়ার করি.৩য় অধ্যায়ে স্পিরিচুয়াল পড়োডাক্টিভিটিতে “তাকাওয়া” নিয়ে কথা বলা হয়েছে।এই তাকওয়া মানে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা যে বিষয়গুলো অপছন্দ করেন তা এড়িয়ে যাওয়া।ইসলামের একটি কে কনসেপ্ত হলো,এই তাকওয়া যদি আপনি মেনে চলেন তবে সেটা আপনাকে আপনার ইহকাল ও পরকাল দু’টোতেই কল্পনাতীত পুরস্কারের ব্যবস্থা করে দিবে।

আরেকটা হচ্ছে তাওয়াক্কুল ইলাল্লাহ । যার অর্থ হলো আল্লাহর উপর ভরসা করা। আমরা সবসময় মনে করি,আল্লাহর প্রতি পরোক্ষভাবে আস্থা রাখাই যথেষ্ট-সবকিছু এমনিতেই ভালোতে রূপ নিবে,যেহেতু মালিক সর্বঅদা আমাদের সাথে আছেন।দেখেন পাখিরা কিন্তু শুধু তার বাসায় খাবার পৌছানোর অপেক্ষায় বসে থেকেনা তারা তাদের মালিক উপর বিশ্বাস রাখেন এবং একই সাথে জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে যায় সবশেষে তাড়া সকালে খালি পেটে বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যাবেলা ভরা পেটে বাসায় ফিরে আসে।

তার মানে কি দাঁড়ালো?জীবনে স্পিরিচুয়াল এনার্জি পেতে হলে অবশ্যই জীবিকার সন্ধানে বের হতে হবে এবং সাথে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে সৃষ্টিকর্তার উপর অসীম বিশ্বাস রেখেই।

এরপর আছে শোকর আদায় করা বিষয়টা।আপনার কাছে যাই আছে তা নিয়ে আপনার স্রষ্টার নিকট আপনাকে কৃতজ্ঞ হতে হবে তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। যদিও আপনার জীবনের ক্রান্তিকালে হয়তো সেটা করা আপনার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে কিন্তু লেখক এরপরই এখানে যুক্ত করেছেন “সবর”শব্দটি।স্রষ্টা আপনাকে পরীক্ষা করবেন ভয়,ক্ষুধা,ধন,প্রাণ এমনকি এক কণা শস্য দ্বারাও হতে পারে।আপনার ভালো সময় ফিরেপেতে আপনাক অবশ্যই তার জন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং আপনার মালিকের উপর আপনার বিশ্বাস রেখে কাজ করে যেতে হবে।

এখান এসুন্দর একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে,আইয়ুব নবী ছিলেন অত্যন্ত সম্পদশালী।তার অনেকগুলো সন্তান ছিলো এবং তিনি ছিলেন ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী।আল্লাহ তাকে মহা পরীক্ষায় ফেললেন।তিনি তার যাবতিয় সম্পদ এবং সন্তান্দের হারিয়েছিলেন।আর তার স্বাস্থ্য এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে, রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কেউই তার নিকট আসতো না।কেবল তার অনুগত স্ত্রীই তার যত্ন নিতেন।আইয়ুব এই সংকটে চরম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অবশেশে তিনি তার আগের সকল কিছু ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।এই কাহিনীটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহর নিকট একজন নবীও পরীক্ষিত হন আর আমরা তো কেবল সামান্য মানুষ!

এরপর হলো ইহসান।ইহসান মানে হচ্ছে আপনি এমনভাবে আপনার স্রষ্টার ইবাদত করুন যেনো আপনি তাকে দেখছেন।আর যদি আপনি তাকে না’ও দেখতে পান তবে এটা মনে করে তার ইবাদত করুন যেনো মনে হয় তিনি আপনাকে দেখছেন।কেউ পূর্ণতার সাথে কাজ করলে স্রষ্টা তাকে পছন্দ করেন।কাজ এত্রুটি রেখে যদি আপনি ওই কাজটি অতি দ্রুত সম্পন্ন করেন তাহলে ওই কাজের ফলাফল কি হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর আমি আপনাদের নিকত রাখলাম। তাই আপনাকে অবশ্যই ইবাদতে মনোযোগী হতে হবে।এবং ইবাদতের সময়টাকে নিজের মন থেকেই উপভোগ করার চেষ্টা করুন।

আরেকটা ভালো লাগার টপিক হলো-সময়কে মূল্যায়ন করা শিখুন।মানুষ বলে সময়ই অর্থ-কথাটি ঠিক নয়।সময় হচ্ছে জীবন।যে ব্যক্তি সময়ের মূল্য জানে সে জীবনকেও ভালোভাবে জানে।কারণ,সময়ই হলো আপনার জীবন।আবু বকর বিন আইয়্যাশ বলেন-তাদের হাৎ হেকে দিরহাম ফসকে গেলে আপনি তাকে বিলাপ করতে শুনবেন যে-আমার দিরহাম চলে গেছে।কিন্তু সে যখন তার নিজের জীবনের কয়েকঘন্টা সময় নষ্ট করে ফেলে সে এটা কখনোই বলেনা যে-হায় আমার জীবন চলে গেছে!

এবার কথা বলি ফিজিক্যাল প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে, লেখক বলেছেন আমরা যাতে প্রতিদিনের খাবারের লিস্ট করার জন্য একটা ডায়েরি বা ফুড ডায়েরি ব্যবহার করি। যেমন আমরা সপ্তাহিক ছুটির দিনে আগামী সপ্তাহের মীলের অগ্রিম পরিকল্পনা করতে পারি।এরপর সঠিক উপয়ায়ে যাতে নিয়মিত রোজা পালন করি।এরপর দিনের শুরুটা আমাদের পুষ্টিকর নাশতা দিয়ে শুরু করতে হবে।পুষ্টিকর নাশতা মানেই ব্যায়বহুল খাবার কিংবা দামী খাবার নয়।সেটা হতে পারে পনির দিয়ে একটা ডিমের অমলেট কিংবা সম্পূর্ণ গমের পিঠা অথবা ভুষিযুক্ত গমের রুটি।তিনবেলার খাবারের মাঝে আমাদেরকে ভালো হালকা নাশতার ব্যবস্থা রাখতে হবে সেটা হতে পারে মিশ্র বাদাম,শুকনো ফল কিংবা হতে পারে খেজুর।এটা আপনাকে আপনার কাছে আরো মনোযোগী হতে সাহায্য করবে এমনকি দেহে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।প্রতিদিন অন্তত কমপক্ষে ১থেকে ২লিটার পানি পান করতে বলা হয়েছে।খাবার ভাগ করে খেতে বলা হয়েছে অর্থাৎ ধরুন আপনি খাচ্ছেন এমন সময় কেউ আসলে তাকেও খাওয়ার জন্য ডাকতে হবে।সহিহ মুসলিমে বলা হয়েছে- দুইজনের খাদ্য ৩জনের জন্য যথেষ্ট,৩জনের খাদ্য ৮জনের জন্য যথেষ্ট। তারমানে একোঙ্কিছু একা ভক্ষণ করা যাবেনা অর্থাৎ আপনার সামনে যদি কেউ থাকে আরকি।

সবশেষে আরেকটি ভালোলাগার বিষয় বলবো,সেটা হলো-ফাস্ট ফরোয়ার্ড টেকনিক। প্রতিনিয়তই আমাদের এই অনুশীলনটি করা উচিত।এটা হচ্ছে কেবল নিজেকে জিজ্ঞাসা করা যে-আমি আগামী একবছর পর কোথায় থাকবো কিংবা গত বছরে আমি যা করেছি তার জন্য আমি এখন আমার স্রষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য এখন তার সামনে জবাব্দিহি করতেছি।এভাবে আমরা নিজেকে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ করে রাখতে পারি।

এরপর আপনি এই বই পড়লে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন যেমন-কিভাব এঘুমানোর সঠিক অভ্যাস করবেন,কিভাবে সামাজিকভাবে নিজেকে আরো কর্মক্ষম করবেন,কিভাবে নতুন নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা যায়,তারপর আছে আপনার রমজান মাসের সময়গুলোকে আরো বেশি ভালভাবে কাজে লাগাতে পারবেন এসব বিষয়গুলো।

তো চাইলে আরো অনেক কিছুই বলতে পারি,কিন্তু ভিডিওটি বড় হয়ে যাচ্ছে।তাই আর কথা না’ই বলি।

বইটির যে বিষয়গুলো আমার ভালো লেগেছে তা হলো- বইটির প্রতিটি চ্যাপ্টারের শেষে ওই চ্যাপ্টারে আলোচিত বিষয়গুলোকে সামআপ করে ছকের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে।এরকম্ভাবে কম্পাইল করার কারণে একজন পাথক হিসেবে আপনি খুব সহজেই আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে আরো সহজ ধারণা পাবেন।

শেষ কথা- তথাকথিত আধুনিকতা অর্জনের পিছনে ছুটতে গিয়ে মনুষ্যত্ব হারিয়ে আজ আমরা “আধুনিক জীব” এ পরিণত হয়েছি যেখানে শুধুমাত্র যান্ত্রিকতা ব্যাতীত অন্যকিছুই নেই।আমরা এড়িয়ে চলতেছি আমাদের বিবেকবোধ,আত্নার খোরাক এমনকি নিজের সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি।এই বইয়ের বিভিন্ন প্রোডাক্টিভ লাইফস্টাইল অনুসরণের মাধ্যমে দুনিয়াবী জীবনের সফলতা একজন মানুষের পদচুম্বন করে তাকে শেষ বিচারের কঠিন সময়ে সফলতার প্তহ দেখানোর এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে পথ দেখাবে।বইটি প্রতিটি মুসলমান ভাই-বোনদের সংগ্রহে থাকা উচিত,মানে  আমার যেটা মনে হয়েছে আরকি।

তো যাইহউক আপনাদের জন্য শুভকামনা ।আপনারা বইটি কিনুন ,পড়ুন সাথে আরো বেশি নিজেকে প্রোডাক্টিভ করে তুলুন।ধন্যবাদ সবাইকে।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your valuable comment.