বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

The Art of Happiness 😇 by Dalai Lama & Howard Cutler । Book Review in Bangla । বাংলা রিভিউ

 

নমষ্কার এবং সালাম, আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমরা সবসময়ই চাই যে কিভাবে, ঠিক কিভাবে আমরা আমাদের জীবনে সুখ পেতে পারি কিংবা আমরা আমাদের লাইফে সবসময়ই হন্য হয়ে সুখের সন্ধান করতে থাকি।

অথবা আমরা নিজেকে প্রশ্ন করি যে, কিভাবে আমি সুখী মানুষ হতে পারি।


এমন এটাও হয়তো কখনো কখনো ভাবি যে কিভাবে সুখ খুঁজে পাবো এটা নিয়ে যদি কোন বই থাকতো তবে অসাধারণ হতো।

যদি আমার এতক্ষণ বলা এই ধারণাগুলো সঠিক হয়ে থাকে তবে আমি বলবো আপনি সঠিক একটা ভিডিও দেখতে আসছেন। আজকে আমার হাতে যে বইটি রয়েছে সে বইটি হলো দ্যা আর্ট অব হ্যাপিনেস।বইটি লিখেছেন তিব্বতের আধ্যাত্নিক প্রধান ১৪তম দালাই লামা ,যার প্রধান নাম হচ্ছে তেনজ়িন গিয়াৎসো এবং

একজন আমেরিকান সাংবাদিক যিনিও এই বইয়ের সহ-লেখক হওয়ার্ড কার্টলার।তিব্বতে শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ইনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই বইটি 1998 সালে প্রকাশিত হয় আর বইটির ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। এখন বইটি নিয়ে আসল আলোচনায় আসি ,

বইটিতে দালাই লামা তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকে বৈজ্ঞানিক প্রমানের মাধযমে তুলে ধরেছেন।

 

 দ্যা আর্ট অফ হ্যাপিনেস সুখ কিভাবে জীবনে খুঁজে পাওয়া যাবে তা নিয়ে লেখা একটি দুর্দান্ত বই।

তো আমি বইগুলোর কিছু লেখাকে ছোট ছোট পয়েন্টে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আমাদের জীবনের অস্তিত্বই হচ্ছে সুখ খুঁজে বের করাঃ বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে বেশিরভাগ অসুখী মানুষেরাই তাদের জীবনে বেশিরভাগ সময় একা থাকে এমনকি তারা প্রায়ই সামাজিকভাবেও নিজেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করে।বিপরীতে সুখী মানুষেরা তাদের জীবনে অনেক বেশি সৃজনশীল এবং সামাজিক হয়।

 পছন্দ করাঃ প্রতিনিয়ত সুখ খোঁজার সচেতন সিদ্ধান্ত আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এখন আসতে পারে আপনি কিভাবে প্রতিদিন সুখের চর্চা করতে পারেন।

যেমন, আপনি যদি সকাল বেলা জগিং করেন তাহলে আপনার রানিং সু গুলো রাতে ঘুমানোর আগে দরজার পাশে রাখতে পারেন।যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনাকে জুতো খুঁজতে গিয়ে বিরক্ত দিয়ে দিন শুরু করতে না হয়।

এরপর হতে পারে, আপনার নিজের রুমে কাগজে এমন কিছু পোস্টার লাগাতে পারেন যেগুলো কিনা দেখলে আপনার মস্তিষ্ক আরো আনন্দঘন থাকতে পারে। সেখানে হতে পারে ভালো কোন উদ্ধৃতি কিংবা আপনার অতীতে কোন স্বপ্ন পূরণ হওয়ার গল্প।

আপনার শোয়ার খাটের পাশেই আপনার ওজন মাপার মেশিনটি রাখতে পারেন,যাতে প্রতিদিন আপনাকে নতুন করে আপনার নিজের ওজন নিয়ে চিন্তিত না হতে হয় এবং আপনি নিজের চাহিদা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে পারেন। এভাবে সুখ খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আপনার পছন্দের প্রতি আপনাকে জোর দিতে হবে।

 মিল খুঁজে নেওয়াঃ প্রতিদিন আপনাকে এমন মানুষের নিকট আপনাকে যেতে হবে যারা কিনা অনেক বেশি জীবন নিয়ে পজিটিভ এবং তাদের সাথে আপনার জীবনের ভালো দিক গুলোর শতভাগ মিল রয়েছে। কারণ আমরা সবাই জীবনে সুখ পেতে চাই,দুঃখ নয়।

আপনি একা ননঃ গৌতম বুদ্ধের সময় কিসাগোতামি নামে এক মহিলা ছিলেন। যার একটা বাচ্চা মারা গিয়েছিলো। মহিলাটি সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন যে কে তার বাচ্ছাকে বাঁচাতে পারবে তখন সবাই উত্তরে বললো স্বয়ং বুদ্ধ তার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারবেন। তিনি বুদ্ধের নিকট গেলেন এবং বুদ্ধও বললেন যে তিনি পারবেন কিন্তু একটা শর্ত আছে। শর্তটি হলো, যদি ওই মহিলাটি এমন একটি বাড়ি থেকে সরিষার বীজ আনতে পারেন যেখানে কোন সন্তান,স্ত্রী কিংবা কোন বাবা-মা মারা যান নি। মহিলাটি কয়েকদিন ধরে অনেক খুঁজলেন কিন্তু শর্তমোতাবেক এমন কোন বাড়ি খুঁজে পাননি। তখন বুদ্ধ বললেন, আপনার শোকে আপনি একা নন। সবার মধ্যেই এমন কিছু শোক রয়েছে যেগুলো থাকা সত্ত্বেও তারা নিজ অবস্থানে সেই শোক কাটিয়ে বেঁচে আছেন। তিনি আরো বলেন, কোন কিছু হারানো ছাড়া কিংবা কোন ক্ষতি ছাড়া কেউ থাকতে পারেনা, কেউ একেবারে মুক্ত থাকতে পারেন না। প্রকৃতির নিয়ম মেনে নিয়েই আমাদের জীবন।

 এরপর আরেকটা পয়েন্ট, আমাদের সমস্যাগুলো আমাদের দ্বারাই সৃষ্টি হয়ঃ আপনি যদি নেতিবাচক কোন কিছুতে নিজেকে না জড়ান তবে আপনি অবশ্যই নিজেকে কোন যন্ত্রণা অনুভব করবেন না। আমরা চাইলে আমাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলো এড়াতে পারবো না কিন্তু আমরা চাইলেই সেই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের যে সমস্যাগুলো হয়েছিলো সেগুলোকে আবার সংশোধন করতে পারবো।

 

প্রকৃতি এবং সুখের উৎসঃ

 ক্যাটলার তারপশ্চিমা বৈজ্ঞানিক পটভূমির মাধ্যমে কিছু বিশ্বাস অর্জন করেছিলো।যেমন, সুখ একটি রহস্য এবং আমরা সবচেয়ে বেশি আশা করতে পারি দুর্দশা এড়ানোর ব্যপার টা। তখন দালাই লামা তাকে বুঝিয়েছিলেন যে, সুখ আমাদের বিলাসিতা নয় বরং এটা আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং সুখের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু উপায় রয়েছে। আমাদেরকে সেই উপায়গুলো সনাক্ত করতে হবে যেগুলো কিনা আমাদেরকে দুর্দশা থেকে বের করে সুখের দিকে পরিচালিত করবে। সম্ভবত সুখ সম্পর্কে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো সুখ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক কিছু যার জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা এবং নিয়মানুবর্তিতা।

 সুখের আবাদঃ

বৌদ্ধ ধর্মে আছে- কোন মানুষের সুখ শুধুমাত্র সম্পদ,পার্থিব তৃপ্তি,আধ্যাত্মিকতা এবং আলোকিতকরণ এসবের মধ্যেই রয়েছে। তারজন্য আরো প্রয়োজন, সুস্বাস্থ্য এবং নিকট ফ্রেন্ড সার্কেল।কিন্তু সত্যিকারের সুখ তখনই কেউ অনুভব করতে পারবে যখন সে তার নিজের চেতনা এবং জ্ঞানকে নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।একটি শান্তিপূর্ণ মন কিংবা কোন অর্থপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হওয়াও সুখের সমান কিছু।সুখের প্রাথমিক উপায় হলো অন্য ব্যাক্তির সাথে মমতা এবং ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা।অন্যের সাথে আমাদের নিজের কোন কোন জিনিসের মিল রয়েছে যদি আমরা সবসময় সেটাই খুঁজে পেতে পারি তবে আমরা কখনোই আমরা নিজেকে অন্যের চেয়ে অসুখী মনে করবোনা।কারণ,আপনি যত বেশি অন্যের বেশি কিছু আছে এমন কিছুবনিয়ে ভাববেন তত বেশিই আপনার মধ্যে হতাশার জন্ম নিবে।

নেতিবাচক আবেগ কিংবা নেতিবাচক অবস্থা কোনটারই বাস্তবে কোন ভিত্তি নাই। এগুলো পারলে আমাদেরকে আমাদের ভালোভাবে দেখার অবস্থান থেকে আমাদেরকে সরিয়ে দেয়।আমরা যতবেশি ইতিবাচক জিনিস নিয়ে ভাবতে পারবো আমরা ততবেশি সত্যিকারের প্রকৃতি এবং এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিকটে আসতে পারবো। ইতিবাচক মনের অবস্থা যে শুধুমাত্র আমাদের মনের জন্য ভালো তা শুধু নয়, এটা আক্ষরিকভাবেই আমাদের সকল কিছুকে পরিবর্তন করে এমনকি আমরা প্রতিদিন যাদের সাথে কথা বলি,কাজ করি তাদের উপরও প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের যতই সমস্যা হউক না কেনো অবশ্যই আমাদের নেতিবাচক মানসিক অবস্থা দূর করে ইতিবাচক দিকগুলো আরো বাড়াতে হবে।

এরপর, আমাদের কখনোই সুখ এবং মনের সাময়িক আনন্দকে একসাথে করা যাবেনা। সাময়িক আনন্দ শুধুমাত্র আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে সাময়িক খুশি করে,যেটাকে আসলে আমরা সুখ মনে করে ভুল করি।হ্যাপিনেস জিনিসটা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়।একজন শিক্ষার্থী সবসময় উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে কিন্তু সে যদি কোন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে তাহলে সে নিশ্চয়ই কোন একসময় ভালো স্ট্যাবল অবস্থা ফিরে পাবে।

তাই,সময়ের সাথে সাথে অবশ্যই নেতিবাচক আবেগগুলোকে প্রশ্রয় না দিয়ে সেগুলোকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে।বিশেষ করে আমাদের রাগ,ঘৃণা কে সরিয়ে দিয়ে তা সহনশীলতা এবং ধৈর্যের সাথে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এগুলো দালাইলামার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি এই বইয়ে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।

এরপর একটা পয়েন্ট আসে, করুণা এবং সংযোগঃ

দালাই লামার মতে, মানুষের মৌলিক প্রকৃতি হতে হবে নম্র। একজন মানুষ যত বেশি অহিংস এবং নিরপেক্ষ হবে তার মধ্যে ততবেশি অন্যের জন্য সহানুভূতি জন্মাবে। সহানুভূতি মানে এই না যে এটা আপনি কারো খারাপ কাজে তাকে উৎসাহ দিবেন সহানুভূতি মানে হচ্ছে আপনি তার ভালো কাজগুলোকে বেশি বেশি স্বীকৃতি দিবেন সে ব্যর্থ হলে তার পাশে থাকবেন। কারণ,এটা মনে রাখবেন আজ অন্য কেউ যে সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আপনাকেও আগামীতে সেরকম কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়তো হতে হবে।

মানুষকে ভালোবাসাঃ প্রত্যেক মানুষই তার জীবনে অন্যদের থেকে সবসময় ভালোবাসা পাওয়ার আশা করে,তারা চায় কেউ তাদের কষ্টগুলো ভাগাভাগি করবে। কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এটা চিন্তা করেনা যে, আপনাকে কেউ তখনই ভালোবাসবে যখন আপনি তাদের ভালোবাসতে পারবেন, আপনার নিজের মনে তাদের জন্য পজিটিভ কর্ণার আবাদ করতে পারবেন। সসহানুভূতিশীল মানুষ সবসময়ই নিজের মধ্যে স্বাধীনতা অনুভব করে এবং তারা নিজের মনে বিরল শান্তি খুঁজে পায়।

 

 

সবচেয়ে বড় কথা হলো জীবনে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। নিজের সংকল্পে কোন সমস্যা থাকলে সেটায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং তারজন্য প্রচেষ্টা ভালিয়ে যেতে হবে। কথায় আছে, পরিশ্রম করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানো সম্ভব।

আমাদের জীবনে সুখী হবার অধিকার কিংবা দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠার অধিকার সবার আছে। তাই আমাদের নিজের পাশাপাশি অন্যের অধিকারকেও সম্মান করতে হবে।

 

সবশেষে বলবো বইটি সংগ্রহ করুন এবং শীঘ্রই পড়ুন। এতক্ষণ যদি ভিডিওটি দেখে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চয় বুঝেছেন বইটি কেমন। আধ্যাত্নিক বযাক্তিত্বের মানুষের এটাও আরেকটি সেরা বই। বইটির পেপারবযাক এডিশন ১৫০ থেকে ১৮০টাকার ভেতর পেয়ে যাবেন। তো আজ যাচ্ছি তবে আগামী সপ্তাহে আবার আসবো।সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাkuন ,সুস্থ থাকুন।


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your valuable comment.