বিলাসী অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি ছোটগল্প।
গল্পটি বলা হয়েছে 'ন্যাড়া'র জবানবন্দিতে।
ন্যাড়ার সাথে পড়ত মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুঞ্জয়কে আজীবন সবাই থার্ড ক্লাসে পড়তে
দেখেছে। তাকে কেউ সেকেন্ড ক্লাসে উঠতে দেখে নি। তার ফোর্থ ক্লাসে পড়ার ইতিহাসও
জানা যায় না। তার আপন বলতে কেউ ছিল না, শুধু এক খুড়ো
ছাড়া। খুড়োর কাজ ছিল ভাইপোর বিরুদ্ধে হরেক রকম দুর্নাম রটানো।
মৃত্যুঞ্জয় নিজে রান্না করে খেত। তার বাড়ি
সংলগ্ন আমবাগান থেকে আয়কৃত অর্থে দিন গুজরান হত তার।
গ্রামের ভিতরে মৃত্যুঞ্জয়ের নামে হরেক রকম দুর্নাম শোনা গেলেও, সে ছিল দিলদরিয়া। সে দোকান থেকে এটা ওটা কিনে খাওয়াত সবাইকে। দরিদ্রকে সাহায্য করত সে। কিন্তু,
তার থেকে সাহায্য পাবার কথা কেউ স্বীকার করত না, গ্রামের মাঝে মৃত্যুঞ্জয়ের এমন ছিল সুনাম।একসময় মৃত্যুঞ্জয় রোগে শয্যাশায়ী হয়। সে
সময় সাপুড়ে কন্যা বিলাসী তাকে সেবা করে সুস্থ করে থাকে। মৃত্যুপথযাত্রী
মৃত্যুঞ্জয়কে যমের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনে সে। একসময় তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এতদিন মৃত্যুঞ্জয়ের সেবায় এগিয়ে না আসলেও
কায়স্থ সন্তান মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীর বিবাহে দরুন সৃষ্টি
হওয়া সামাজিক
অনাচার-এর
বিরুদ্ধে এগিয়ে আসে তার খুড়ো। অন্নপাপী মৃত্যুঞ্জয়ের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী
বিলাসীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালায় সে ও তার সাঙ্গপাঙ্গ। ন্যাড়া রোগাক্রান্ত
দুর্বল মৃত্যুঞ্জয়ের তা প্রতিরোধের কোন ক্ষমতা ছিল না। এরপর তারা ঐ বাড়ি ছেড়ে
মালপাড়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করে।
এর বহুদিন পর ন্যাড়ার সাথে দেখা হয়
মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর। মৃত্যুঞ্জয়কে দেখে অবাক হয় ন্যাড়া। সাত পুরুষের কায়স্থ
যে সাপুড়েতে রূপান্তর হয়ে গিয়েছে! এরপর,
বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে থাকা শুরু করে সে। তাদের সাথে থেকে
মন্ত্রসিদ্ধ হয় ন্যাড়া।
সাপ ধরার বায়না আসলেই তা হরেক রকম অজুহাত দিয়ে
দূরে সরানোর চেষ্টা করত বিলাসী। কিন্তু,
মৃত্যুঞ্জয় টাকার লোভ সামলাতে পারত না। এমনই একদিনে, এক গোয়ালার বাড়িতে এক খরিশ গোখরোর কামড়ে মৃত্যু ঘটে তার। তাবিজ-মন্ত্র
কোনটাই তার 'মৃত্যুঞ্জয়' নামটির
সার্থকতা বজায় রাখতে পারে নি। তার মৃত্যুর পর বিলাসীর বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করে।
আর ন্যাড়ার সাপুড়ে জীবনের ইতি ঘটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thank you for your valuable comment.