বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২১

সাঁতারু ও জলকন্যা- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (বই রিভিউ)

  শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় , তার বিশেষ লেখনি শক্তি দ্বারা আমাদের বাঙালিদের মানসপটে বিশেষ জায়গা দখল করে রয়েছেন। দূরবীণ, পার্থিব, মানবজমিন ইত্যাদি জনপ্রিয় উপন্যাসের তিনিই অন্যতম স্রষ্টা। বাংলা সাহিত্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী একজন লেখক।

আজকে তারই ধারাবাহিকতায় আমার হাতে রয়েছে তার “সাঁতারু ও জলকন্যা” নামের অনন্য উপন্যাসটি। তো আগেই বলে নেই, বইটি মূলত বলতে গেলে বড়দের একটি প্রেমের উপন্যাস।যেখানে দেখানো হয় একজন বালিকা কিভাবে তার কিশোরী বয়সে পরিণত হয় এবং তার মধ্যে কিভাবে প্রেম জাগ্রত হয় এসবকিছু। বইটি পড়ে পড়ে আপনি এতটাই মুগ্ধ হবেন যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। বইয়ের সাইজ দেখে নিশ্চয়ই আপনারা আন্দাজ করতে পারতেছেন যে বইটি পড়তে ঠিক আমার কতক্ষণ লাগতে পারে।আপনি যদি উপন্যাস প্রেমী হয়ে থাকেন তবে এই বইটি পড়তে আপনার সর্বোচ্চ আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে। আমি তো এক বসাইতেই এটা শেষ করে তারপর উঠেছি।

তো যাইহোক এখন যদি কাহিনী সংক্ষেপ এ আসি তাহলে আমি বলবো,

বইটিতে উপন্যাসের যে বৈশিষ্ট্য আছে তার সবকিছুই আছে।এখানেও অনেকগুলো চরিত্র রয়েছে।যাদের মধ্যে হলো যিনি গল্পের নায়ক অর্থাৎ,অলক। তার দুই বোন মধুরা এবং প্রিয়াঙ্গি। যারা কিনা দুইজনেই যথেষ্ট মেধাবী এবং খুবই ভালো গুণে কিংবা প্রতিভার অধিকারিনী।রয়েছে অলকের পিতা সত্যকাম এবং মাতা মনীষা। এই গল্পে সত্যকাম এবং মনীষা দুইজনেই কালচারাল লাইনের লোক।কেউ নাটকের সাথে যুক্ত আবার কেউ নৃত্যনাট্যের সাথে যুক্ত। আরো চরিত্রের মধ্যে

রয়েছে সুছন্দা,সোনালীসহ আরো অনেকে এবং গল্পের নায়িকা বামুনের মেয়ে বনানী।

উপন্যাসের কাহিনির সূত্রপাত হয় অলক নামে এক সাঁতারু ছেলেকে নিয়ে। যে কিনা জলের মাঝে ঐশ্বর্যের সন্ধান পায়। জলে খুঁজে পায় নিজের অস্তিত্ব। জল তার খুবই প্রিয়। বি,এ পাশ করা সেই সাঁতারু ভাল চাকরি করে, কাপ-মেডেলে ঠাঁসা তার ঘর।ঘর সংসার মা বাবা বোন এদের সাথে যার কোনো ঘনিষ্টতা নেই। অলকের বাবা এটাকে জেনারেশন গ্যাপ বলেই মনে করেন। কিন্তু মার মন্তব্য ছেলেকে বুঝতেই পারেন না তার বাবা। মা মাঝে মাঝে বুঝেন আবার বুঝেন না, তার কাছে কেমন যে অস্থির লাগে। নিজের ছেলেকে বুঝতে না পারা নিশ্চয়ই একটা অস্থিরতার বিষয়। মেয়েদের সাথে অলকের সম্পর্ক সহজ ও স্বাভাবিক। বিভিন্ন মিট- এ মেয়ে সাঁতারুদের সাথে দেখা হয়, আলাপ বা আড্ডা হয়। অলক যার আশেপাশে অসংখ্য মেয়ে ঘুরে কিন্ত অলক তাদের চায় না। মেয়েরা তাকে আপন করে পেতে চায়। কিন্তু তার নাগাল পায় না কোনভাবেই। সে যাকে চায় তার শরীর হবে জলের মত গভীর। যেখানে আকণ্ঠ ডুবে যাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে সে দেখতে পায় জলকন্যাকে। কিন্তু সেটা কতটা বাস্তব, কতটা কল্পনা সে নিজেও জানে না।



হঠাৎ একদিন ডাঙ্গায় যেন সত্যি সত্যি দেখা পেল জলকন্যার। সত্যিকারের মানুষ রূপে।

যে কিনা গল্পের নায়িকা বনানী। আগেই বলেছি বনানী বামুনের মেয়ে ,তবে বনানীর মায়ের মৃত্যুর পর বনানীর বাবা আবার বিয়ে করেন।সেই সৎ মা প্রথম প্রথম তাকে দেখতে পারলেও যখন তার নিজের সন্তান হলো তখন বনানীকে আর দেখতে পারতো না।এমনকি তাকে ইঁদুরের বিষ খাইয়েও মেরে ফেলতে চেয়েছিলো যদিও বাবার হাসপাতালে নেওয়ার সুবাধে সেই যাত্রায় বনানী মরতে মরতেও বেঁচে যায়। বনানী তখন ছিলো খুবই রোগা এবং অসুস্থ টাইপের।তো আস্তে আস্তে এক পর্যায়ে সৎ মায়ের অত্যাচারে বনানী বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়।কয়দিন এর বাড়ি থাকে তো কয়দিন ওর বাড়ি ।

এভাবে বনানী অনেক ঘুরে ঘুরে অনেক জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করার পর সবশেষে এসে পৌছায় গল্পের নায়ক অর্থাৎ অলকেরই দাদুর বাড়িতে। এখানেই তার জরাজীর্ণ দেহের পরিবর্তন ঘটে তার জীবনের পরিবর্তন ঘটে। এখানেই তার মনমানিসকতা চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন ঘটে। সে এখানেই নিজের তেরো বছরের জরাজীর্ণ পরিস্থিতি থেকে ১৫বছর বয়সের লাবণ্যময়ী যুবতী হিসাবে দিনে দিনে গড়ে উঠে। অথচ দুই বছর আগেও কিনা যাকে কেউ বলতো না যে তার বয়স এখন ১৩। যে কিনা সব সময় কথায় কথায় বলতো, ম্রা যাওয়ার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। এই ২বছরের বনানীর আমূল পরিবর্তন হয়, সে নিজেও ভাবে যে “শুধু বেঁচে থাকতে পারলে,কোনরকমেও কেবলমাত্র বেঁচে থাকতে পারলে যে জীবনে অনেক কিছুই হয়।’’

এভাবেই বনানী এবং অলক দুইজনের মনের সম্পর্ক হয়।

বইটিতে দুটি উপন্যাসের কথাও বলা হয়েছে ।যেগুলো হলো , শরৎচন্দ্রের পল্লী সমাজ এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটদের জন্য লেখা বই রাজসিংহ। যদি আপনারা এই বইগুলোর রিভিউ দেখতে চান তবে কমেন্ট করে জানান। আপনাদের কমেন্ট পেলে তবেই রিভিউ করবো।

এই বইয়ে পাওয়া আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইন হলো শেষ পৃষ্ঠায় পাওয়া একটা লাইন।তা হলো- “শুধু বেঁচে থাকাটাও ভীষণ ভালো। শুধু যদি বেঁচে থাকা যায় তাহলেও কতো কী হয়।”


তো বইটি ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অর্থাৎ যদিও সেটা বর্তমান ময়মনসিংহ । বইটি আনন্দ পাবলিশার্সের একেবারে অরিজিনাল প্রিন্ট। বইটি আমি ১৮০টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। আপনারা যদি অল্প সময়ে খুবই বাস্তবমুখী একটি উপন্যাস পড়তে  চান তবে আমি আপনাদের কে এই বইটি পড়ার জন্য অবশ্যই অনুরোধ করবো।

নিত্যনতুন বইয়ের রিভিউ পড়তে, আমাদের এই ব্লগটি আপনার ই-মেইল দিয়ে ফলো করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your valuable comment.